শেখ রাজীব হাসান,গাজীপুরঃ
গাজীপুরে ৩টি মন্দিরে দুর্বৃত্তের হামলায় প্রতিমাসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।স্থানীয় সুত্র জানায়,বৃহষ্পতিবার সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে আনুমানিক ৪/৫ শত’লোক লাঠিসোটা নিয়ে কাশিমপুর থানা এলাকায় পরপর তিনটি মন্দিরে হামলা চালায়। মন্দিরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৯জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। আটককৃতদের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানার ১৬জন শ্রমিক রয়েছে। হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জিএমপি,পুলিশ প্রশাসন।
মন্দিরে ভাংচুরের ঘটনার খবর পেয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম,গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির ও গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন।
এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মো.জাকির হাসান ও গাজীপুর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুন সাহা জানান,বৃহষ্পতিবার সকালে সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর বাজার এলাকায় পরপর তিনটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা। এরমধ্যে একটি মন্দিরের সবগুলো প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। অন্য দু’টি মন্দিরে প্রতিমার কিছু কিছু অংশে ভাংচুর করেছে তারা। এসময় এলাকাবাসী হামলাকারী ১৯জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
পূজামন্ডপ ভাংচুরের ঘটনায় আটককৃতরা হলো-কুষ্টিয়ার আল আমিন (১৯),সিরাজগঞ্জের ফরহাদ হোসেন শেখ (২৬) ও পাষান মিয়া (৩০), নাটোরের রিমন পাটোয়ারি (২১),বগুড়ার মাসুদ রানা (২৭) ও মোঃ মাসুদ (২৫), সিরাজগঞ্জের ইব্রাহিম হোসেন (২৫), আব্দুল মমিন শেখ (২১) ও জাহিরুল ইসলাম শেখ (৩০),ময়মনসিংহের বিল্লাল হোসেন (২১),বগুড়ার মোঃ রিপন মিয়া (১৯), সিরাজগঞ্জের শামীম রেজা (২৫) ও রেজাউল করিম (৩০),পঞ্চগড়ের আলমগীর কবীর (২৮),সিরাজগঞ্জের সোহাগ (২৬) এবং জামালপুরের অরিছুল আলম (২৬)।
উপরোক্ত সবাই গাজীপুরের কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর এলাকায় থাকে এবং স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানার কর্মী। অপর আটককৃতরা হলো-গাজীপুরের শাকিল আহমেদ (২৫) এবং রাণীশংকৈল থানার মোঃ রাসেল (২১)।
কাশিমপুর বাজারের পালপাড়া শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাশিমপুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবুল রুদ্র, কাশিমপুরের পালপাড়া নামাবাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি পরিমল পাল জানায়, পূজারিরা মন্দিরে পূজা করছিলেন,এসময় হঠাৎ করেই সকাল ৭টার পর কয়েকশ’লোক লাঠিসোটা নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই লক্ষী ও অসূরের প্রতিমা ভাঙচুর করে। এসময় পূজারিরা বাঁধা দিতে গেলে হামলাকারীরা তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর কাশিমপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ব্যবসায়ী সুবল দাসের পারিবারিক মন্দিরে এবং পালপাড়া নামাবাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। হামলাকারীরা এ দু’টি মন্ডপের প্রতিমা ও শব্দযন্ত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর ও উল্টে ফেলে দিয়ে তছনছ করে। এতে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পূজামন্ডপ তিনটি পরিদর্শণ শেষে বলেন,গাজীপুর সিটিকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি মহল পরিকল্পিত ভাবে মন্দিরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আমাদের দেশে ধর্ম নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি নেই। হিন্দু মুসলমানসহ সকল ধর্মের আমরা ভাই ভাই, যার যার ধর্ম সে পালন করবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য একটি মহল পরিকল্পিত ভাবে এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। এটা কোন অবস্থাতে মেনে নেওয়া হবে না। এ ঘটনায় তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তি ও তাদের মদদ দাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করছি।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পূজামন্ডপে আগামী লক্ষীপূজা ও কালীপূজা উদযাপনের জন্য যত টাকা খরচ হয়,তা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। গাজীপুর মহানগরের ১৪৭টি পূজামন্ডপে আমরা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করেছি। আমরা মহানগর ও ওয়ার্ড ভিত্তিক যে হিন্দু কমিটি আছে তাদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ধর্মীয় কাজটি যেন ভাল করে করতে পারে সেজন্য একসঙ্গে কাজ করছি।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস,এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ৩টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাংচুরের খবর পেয়ে ঘটনা¯’ল পরিদর্শণ করি। ভাংচুর করা মূর্তিতে পূজা করা যেমন সম্ভব নয়,তেমনি এ মুহুর্তে প্রতিমা বানানোও সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। তারা ঘট বসিয়ে পূজা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে জানতে পেরেছি ৪/৫ শ’ লোক পূজা মন্ডপে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। এ ঘটনায় ১৯জনকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।